• শুক্রবার, ১ নভেম্বর ২০২৪, ১৬ কার্তিক ১৪২৮
মানসিক রোগের সামাজিক প্রেক্ষাপট

মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়টি আমাদের সমাজে অবহেলিত

সংগৃহীত ছবি

ফিচার

মানসিক রোগের সামাজিক প্রেক্ষাপট

  • প্রকাশিত ১১ অক্টোবর ২০১৮

regular_4110_news_1539189027

ডা. সুস্মিতা রায়

আজকের আধুনিক যুগে বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নত বিশ্বের সমপর্যায়ে নিজেদের অবস্থান প্রতিষ্ঠিত করতে আমরা সবসময় সচেষ্ট। বাংলাদেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থাও এ দৌড়ে পিছিয়ে নেই। কিন্তু প্রযুক্তিনির্ভর এ যুগেও মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়টি আমাদের সমাজে অবহেলিত। এর কারণ হচ্ছে সামাজিক কুসংস্কার, লোকলজ্জা ও মানসিক রোগ সম্পর্কে অজ্ঞতা। মানসিক রোগ সম্পর্কে কিছু ভ্রান্ত ধারণাও আমাদের সমাজে প্রচলিত; যেমন- চিকিৎসায় এ রোগ ভালো হয় না, মানসিক রোগের ডাক্তার সব রোগীকে মানসিক রোগী বানিয়ে দেন, মানসিক রোগের চিকিৎসকরা রোগীকে ঘুম পাড়িয়ে রাখেন, মানসিক রোগের ওষুধের অনেক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে, মানসিক রোগ ভালো হয়ে গেলে আর ওষুধ খাওয়ার দরকার নেই, শুধু সাইকোথেরাপি করে মানসিক রোগ ভালো হয়, মানসিক রোগের চিকিৎসকরাও একসময় রোগী হয়ে যান, বিয়ে দিলে মানসিক রোগ ভালো হয় ইত্যাদি। আবার আমাদের অনেকেরই ধারণা হলো, মানসিক রোগ মানে পাগল বা উল্টাপাল্টা আচরণ করা। কিন্তু মূলত মোট মানসিক রোগীর মাত্র এক ভাগের মধ্যে এ ধরনের উল্টাপাল্টা আচরণ দেখা যায়। আসলে মানসিক রোগের অধিকাংশই আবেগজনিত কিংবা উদ্বেগজনিত। প্রকৃতপক্ষে অন্যান্য শারীরিক রোগের মতোই মানসিক রোগেরও বিভিন্ন কারণ রয়েছে, যার মধ্যে বংশগত, পরিবেশগত, সামাজিক, জৈবিক ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। মানুষের শরীরে কিছু রাসায়নিক পদার্থের ঘাটতিও মানসিক রোগ সৃষ্টিতে দায়ী। আসলে প্রতিটি মানসিক রোগেরই কিছু নির্দিষ্ট উপসর্গ আছে, যার প্রতিটিরই আলাদা বিজ্ঞানসম্মত চিকিৎসা আছে যা সম্পূর্ণভাবে নিরাময়যোগ্য। যদি রোগী ঠিকমতো ওষুধ খান, নির্দেশনা মেনে চলেন এবং নিয়মিত চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন, তাহলে অধিকাংশ মানসিক রোগীই পূর্ণ সুস্থতা লাভ করেন। আবার মানসিক রোগের একাংশের জন্য প্রয়োজন হয় দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা। সর্বোপরি চিকিৎসার মাধ্যমে একজন মানসিক রোগী অন্যান্য সাধারণ মানুষের মতো মর্যাদার সঙ্গে স্বাভবিক জীবনযাপন করতে পারেন।

কিন্তু এ স্বাভবিক জীবন পাওয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় অন্তরায় মানসিক রোগ ও তার চিকিৎসার প্রতি সাধারণ মানুষের ভুল ধারণা, কুসংস্কার আর সমাজের নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি। যার প্রভাবে রোগীদের আজো তাবিজ. পানিপড়া, তেলপড়া জাতীয় অপচিকিৎসার দিকে ঠেলে দেওয়া হয়। শিক্ষা, চাকরি, পারিবারিক কিংবা সামাজিকভাবে তাদের ভিন্ন চোখে দেখা হয়। মানসিক রোগ বলে তাদের পেছনে সময় ও অর্থ ব্যয় করার প্রতি অনীহা প্রদর্শন করা হয়। যদিও কেউ কেউ মানসিক রোগকে গুরুত্ব দিতে চান, তারপরও তারা নানা সামাজিক কারণে কিংবা লোকলজ্জার ভয়ে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নিতে অনিচ্ছুক থাকেন। ফলে এসব রোগী মানসিক সুস্থতার পরিবর্তে অন্ধকারেই থেকে যান দিনের পর দিন। কালো ছায়ায় নিমজ্জিত হয় তাদের জীবন। কাজেই অপচিকিৎসার কবল থেকে মুক্ত করে একজন মানসিক রোগীকে অন্যান্য রোগীর মতো বিজ্ঞানসম্মত চিকিৎসার আওতায় নিয়ে এসে তাদের সামাজিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠার বিকল্প কিছুই নেই। মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পাশাপাশি অন্য সব চিকিৎসককেও মানসিক রোগীদের প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি দেখাতে হবে। যত দ্রুত সম্ভব সব ভ্রান্ত ধারণা দূরে ঠেলে, সব কুসংস্কারের বেড়াজাল ভেঙে, অজ্ঞতার অন্ধকার থেকে বেরিয়ে এসে মানসিক রোগীদের কাছে বিজ্ঞানসম্মত আধুনিক চিকিৎসার কিরণ ছড়িয়ে দিতে হবে। 

লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, মানসিক রোগ বিভাগ, জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ, সিলেট

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads